বর্ষাকালে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা
বর্ষাকালে বায়ুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তার ফলে বেশি পিত্ত সঞ্চয় হয়ে থাকে। একারণে এসময় অগ্নি সর্বদা দুর্বল থাকে। যার জন্য গুরুপাক খাদ্যদ্রব্য, দিবানিদ্রা, নদীর জল পান,অতিরিক্ত ব্যয়াম ও মৈথুন এ সময় একেবারে নিষেধ করা হয়েছে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে। এসময় জ্বর, সর্দিকাশি, অতিসার বা উদরাময়, বিভিন্ন রকমের চর্মরােগ, মাথাঘােরা,খিদে কম পাওয়া, বাতের ব্যথা বৃদ্ধি, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, লেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণ,ডায়েরিয়া, আমাশয় ইত্যাদি রােগ সবই বায়ু ও পিত্তের হেরফেরের জন্যই হয়।এসময় সাধারণ জ্বরে লক্ষ্মী বিলাসরস (নারদীয়), কফকেতু রস, ত্রিভুবনকীর্তি রস বা মৃত্যুঞ্জয় রস প্রভৃতি ওষুধ প্রয়ােগে ভালাে ফল পাওয়া যায়। জ্বরে গুরুচি রস মধু ওষুধের সঙ্গে অনুপান হিসেবে
খাওয়া যেতে পারে। এসময় সৈন্ধব লবণের সঙ্গে হরিতকি খেলে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
|  | 
| বর্ষাকালে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা | 
যদি জ্বরের সঙ্গে সর্দি, কাশি বা দুটোই থাকে সেক্ষেত্রে উপরােক্ত ওষুধের সঙ্গে চিত্রকহরিতকি বা শীতােপলাদি চুর্ণ খাওয়া যেতে পারে। অগ্নিবর্ধন অর্থাৎ হজম ক্ষমতা ঠিকঠাক রাখার জন্য চিকাদি বটি বা অগ্নিকুণ্ডি বটি এবং যাদের অম্লপিত্ত বা টক ঢেকুর ওঠার প্রবণতা আছে তারা রাতে খাওয়ার পর গরম জলে গুলিয়ে অহিপত্তিকর চূর্ণও খেতে পারেন।
উদরাময়ের ক্ষেত্রে প্রধানত জলই দায়ী। তাই সবসময় শুদ্ধ জলই পান করতে হবে। উদরাময় চিকিৎসার থেকে রােগ আটকানােই সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা। উদরাময় হলে কপূরস বাক্টজঘনবটি বা হরিতকি চুর্ণ ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া যাদের পেট গুড়গুড় বা ভুটভুটের সমস্যা রয়েছে তাদের ভাস্কর লবণচূর্ণ অহশ্যই সেবন করতে হবে।
এ তাে হলাে রােগের চিকিৎসার কথা। কিন্তু আয়ুর্বেদশাস্ত্রে রােগ প্রতিরােধই হলাে সর্বোত্তম। কিছু বিশেষ ঋতুচর্চা মেনে চললে সাধারণ রােগগুলিকে সহজেই আটকানাে যায়। তার মধ্যে বহুল চর্চিত হলাে বর্ষাকালে জল ফুটিয়ে পান করা। আমাদের মুনিঋষিরা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ভিত্তিতে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে আরও অনেক বর্ষাকালীন ঋতুচর্যার কথা বলেছেন।
বর্ষাকালে পুরনাে চাল বা গম(আটা নয়) এর সঙ্গে আদা অবশ্যই খেতে হবে। রাতে লঘু ভােজন, অবশ্যই আধপেটা খাওয়া এই সময়ে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালাে। তবে বন্ধুর, শুদ্ধশাক বা ছানার দল কোনও ভাবেই গ্রহণ করা উচিত নয়।
গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আশেপাশে প্রচুর ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতাে ব্যবহার করলে বিনা খরচে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
লিখেছেনঃ ডাঃ সুশােভন পাল 

 
 
 
0 Comments